মালদা

বোমাগুলির আতঙ্ক কাটিয়ে শিক্ষার আলোতে উজ্জ্বল কালিয়াচকের নাম

কালিয়াচক নাম মানেই বোমা গুলি আর সন্ত্রাস কবলিত এলাকা বলেই সারা দেশে পরিচিত। কেবল এ রাজ্যের পুলিশ মহলে পরিচিত নাম নয়। এই দেশের পুলিশের ক্রিমিনাল রেকর্ডে নাম রয়েছে মালদা জেলার কালিয়াচকের। জাল নোট সহ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, অত্যাধুনিক বেআইনি অস্ত্র কারবার, আফিম চাষ নানা অসামাজিক কাজের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে কালিয়াচক। প্রকাশ্যে দিনের আলোতে ঘটে যায় দুষ্কৃতিতের বোমা গুলির লড়াই। খুনোখুনি এই অঞ্চলের নিত্যদিনের ঘটনা। সেই এলাকার এক মেয়ে তামান্না ফিরদৌসি। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮০। রাজ্যে দশম। সে আই.এ.এস হয়ে ওই এলাকার মানুষের ন্যয় বিচারে পাশে দাঁড়াতে চায়। 

বদলেছে সময়। তাই পরিবর্তন হয়েছে এই অঞ্চলের চরিত্র। মাস কয়েক আগেও এই অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় দিনের আলোতে প্রকাশ্যে সাধারণ বাসিন্দা প্রবেশ করতে ভয় পেতেন। তবে রাজ্য সরকারের বিশেষ নজরদারীতে সত্যিই নজর কেড়েছে এবারে মাধ্যমিকের ফলাফল। এবছর মাধ্যমিকের রাজ্য ভিত্তিক ফলাফলে সম্ভব্য নবম ও দশম হয়েছে এলাকার ছাত্র ছাত্রীরা। কেবল তাই নয় এলাকার সন্ত্রাসে স্কুলে পঠন পাঠন অল্প বয়সেয় চুকে যেত এই এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের। কিন্তু সময়ের সাথে পরিবর্তন ঘটেছে এই এলাকার। বারুদের স্তুপের উপর বেঁচে থাকা এলাকার বর্তমান প্রজম্মের ছাত্র ছাত্রীরা সরকারের কন্যাশ্রী, যুবশ্রীর হাত ধরে নতুন দিশার সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েরা শিক্ষার আলোতে আলোকিত হচ্ছে। এলাকার স্কুলগুলিতে বেড়েছে ছাত্রীদের সংখ্যাও। তামান্না ফিরদোসী তথা বামনগ্রাম হাই স্কুলের ছাত্রী এবছর মাধ্যমিকে জেলাতে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। রাজ্য ভিত্তিক ফলাফলে দশম স্থান দখল করেছে সে।

এই বিষয়ে তামান্না ফিরদৌসি জানায়, রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুযোগে পঠন পাঠনের সুযোগ বেড়েছে এলাকার মেয়েদের এমনই জানায় সে। আগামীদিনে আই এ এস আধিকারিক হয়ে নায্য বিচার না পাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানো তাঁর আশা।

এই অঞ্চল থেকে রাজ্য দশম স্থানাধিকারী রফিকুল হাসান জানান, বড় হয়ে চিকিৎসক হয়ে সমাজের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে চায়। শুধু রফিকুল বা তামান্না নয়। এবছর কালিয়াচকের ছাত্র ছাত্রীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় গত কয়েক দশকের তুলনায় বেশ ভালো ফল করেছে কালিয়াচক এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। সরকারী প্রকল্পের সুযোগে পরিবর্তিত হচ্ছে এলাকার সামাজিক পরিবেশ। 

মালদা জেলা পরিষদের মহিলা সদস্যা নিলুফার ইয়াসমিন সরকারী প্রকল্পের সুযোগের কথাই তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের সাথে ছাত্রছাত্রীদের পাশে তিনি থাকবেন। এই মেয়েটির আগামীতে সকলের জন্য প্রেরনা হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেন বর্তমানে বাল্যবিবাহ রোধ করে শিক্ষার হার বহু গুণ বেড়েছে বলে তিনি জানান।

এবিষয়ে ছাত্রীর বাবা মহম্মদ মান্সুর আলি জানান, যেখানে মেয়েরা বাড়ি থেকে বাইরে যেতে ভয় পেত, সেখান থেকে তাঁর মেয়ের পরীক্ষার ফল ভালো হওয়ায় গর্বিত তিনি। 

এদিকে এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার অর্নব ঘোষ বলেন, কালিয়াচকের এই দুই ছাত্র-ছাত্রীকে জেলা পুলিশের তরফে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি তিনি বলেন, আগে এই এলাকাটিকে মানুষ ভাল চোখে দেখত না। কারন ভাল কারনের জন্য এটা পরিচিত ছিল না। কালিয়াচকের মাটিতে ম্নি মুক্ত আছে। বাকিটা তারাই নিজেরা করে নিবে। সেই মতো এই দুই ছাত্র ছাত্রী করেছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে আমারা এই এলাকাটিকে আলাদা পরিচয় দিতে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা নিয়। সেই মতো পুলিশের তরফে বিভিন্ন প্রোজেক্টের মাধ্যমে করেছি। ফলে এরা অভাবনীয় ফলাফল করেছে। তাই তাদের পুনরায় তাদের সাফল্য কামনা করেন জেলা পুলিশ সুপার অর্নব ঘোষ।

বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন নিচের লিংকে 

https://www.youtube.com/embed/3U8Kzqckrus